WORLD CUP 2019

#রাজকাহিনী

রিভিউটা নেওয়ার সময় প্রথমবার মানুষটার চোখে ভয় দেখলাম,
১৩০ কোটি ভারতবাসীর স্বপ্নভঙ্গের ভয়। আম্পায়ারস কলে যখন আউট হলোতখন যেন চোখে মুখে তীব্র হতাশা ও ব্যর্থতার যন্ত্রণা ফুটে উঠছে।
মাথা নাড়তে নাড়তে যখন ড্রেসিংরুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল,
তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না কী থেকে কী হয়ে গেলো।
ভারত ৫-২।
তারপর প্রতিটা উইকেটের পতন যেন তাকে আরও ব্যথিত করছিল।
মাঝে জাদেজার ইনিংসটা ক্ষণিকের জন্য একটু হাসি ফোটালেও,ধোনির আউটে আবার অন্ধকার ঘনিয়ে এলো।

৪ বছরের স্বপ্ন ৪ ঘন্টারও কম সময়ের একটা ইনিংসে শেষ।
অথচ আজ নিউজিল্যান্ডের ইনিংস শেষ হওয়া পর্যন্তও মনে হচ্ছিল ম্যাচটা ভারতই জিতবে।
তবে ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা,তাই অদৃষ্টের এই নির্মম পরিহাস আজ প্রত্যেকটা ভারতীয়কে সহ্য করতে হচ্ছে।

আর সহ্য করতে হচ্ছে অজস্র বিদ্রুপ,টিটকিরি বিরাট কোহলিকে,
যে কিনা শুধু এই প্রজন্মের সেরা ব্যাটসম্যান নয় , ভারতের ক্যাপ্টেনও।
তার দোষটা এই যে সে সেমিফাইনালে রান করতে পারে নি।
সে ২০১৫ সালের সেমিফাইনালেও রান করতে পারে নি,২০১১ সেমিফাইনালেও রান করতে পারেনি।
যদিও তার তিন ফরম্যাটে ব্যাটিং গড় ৫০+ এবং ওডিআই ও টেস্টের নং ১ ব্যাটসম্যান,
তাতে কিছু আসে যায় না।
যদিও এই বিরাট কোহলি ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপের ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট,
২০১৫ সালে টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে ও ৭৭ রান করেছে,
২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালেও সর্বোচ্চ রান তারই,
তারই নেতৃত্বে ভারত অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ বিজেতা ও অজস্র রেকর্ডের মালিক।
কিন্তু তাতে কি আসে যায়?
কিছু লোকের তো একটা কারণ চাই এই মানুষটাকে ছোট করার,
আঘাত করার,বিদ্রুপ করার।

কিছু বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন লোকেরা তো আবার তার স্ত্রীকেও বিদ্রুপ করতে ছাড়ে না।
ম্যাচ জিতলে,"ও তো লোকের পরামর্শ নিয়ে জিতেছে,ও আবার টিমের ক্যাপ্টেন নাকি!"
আবার ম্যাচ হারলে,"ওকে ক্যাপ্টেন্সি থেকে সরিয়ে দাও,সব ভুলভাল সিদ্ধান্ত।"
অথচ এই মানুষটা টেস্ট টিমে কারোর পরামর্শও পায় না,উপদেশও নয়।
তাও ভারত টেস্টে এখনও পর্যন্ত তার নেতৃত্বে বিশ্বসেরা।
যখন টিমের একজন সিনিয়র প্লেয়ারের(ধোনি) দিকে বারবার সবাই অভিযোগ করে ধীরগতিতে রান করার জন্য তখন এই অযোগ্য ক্যাপ্টেনই এগিয়ে আসে তাকে আড়াল করতে , এমনকি কালকেউ এসেছিল।
কারণ সে তাকে খুব শ্রদ্ধা করে।
হ্যাঁ,এই অযোগ্য ক্যাপ্টেনই অনিল কুম্বলের প্রতিবাদ করেছিল,
কারণ ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে রোহিত শর্মা ৩ বলে ০ করেছিল বলে অনিল কুম্বলে তাকে অনেক কথা শোনাচ্ছিল,
তখন এই অযোগ্য ক্যাপ্টেনই বলেছিল,"সবার খারাপ দিন যায়,তাই কাউকে এভাবে বলাটা উচিত নয়। সর্বোপরি এটা একটা পরিবার,এর প্রত্যেক সদস্য সমান গুরুত্বপূর্ণ।"
এই অযোগ্য ক্যাপ্টেনই 'কুল- চা' জুটিকে টিমে এনেছিল।
আর এই অযোগ্য ক্যাপ্টেনই আই সিসি বর্ষসেরা দুটি টিমেরই ক্যাপ্টেন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।
তাও দিনের শেষে এই হারের দায় বিরাট কোহলির।
😇
তার কারণ যুদ্ধে হেরে গেলে তার দায় মন্ত্রী বা সেনাপতির হয় না,হয় রাজার।
আর যে ছেলেটা ১৮ বছর বয়সে ভোররাতে বাবার মৃতদেহ সৎকার করে এসেও সকালে ব্যাট হাতে ময়দানে নামতে পারে শুধু বাবার স্বপ্ন পূরণ করার আশায়,
আর যাই হোক সে মানসিক ভাবে যে কতটা দৃঢ় তা আলাদা করে বলে দিতে হয় না।
এই রাজা আজ হেরে গেছে ঠিকই,তবে হারিয়ে যায়নি।
খুব শীঘ্রই ফিরে আসবে সে নতুন ইতিহাস গড়তে,
যার সাক্ষী থাকবে ১৩০ কোটি ভারতবাসী।
আর আজ বিদ্রুপ করা আপনিও সেদিন বিরাট কোহলির মারা প্রত্যেকটা কভার ড্রাইভ দেখে হাততালি দিয়ে বলবেন,"সাবাশ কিং কোহলি !"

No comments:

ads
Powered by Blogger.